আপনি পছন্দ করতে পারেন, অপছন্দ করতে পারেন; কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের জনগণের বিশাল একটা অংশ জিয়াউর রহমানকে পছন্দ করেন, ভোটের হিসাবে যা কমবেশি ৩৫ শতাংশ। আবার অপছন্দ করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়।
সমস্যাটা হলো যারা পছন্দ করেন তাদের কাছে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। আবার যারা অপছন্দ করেন, তাদের চোখে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠকমাত্র, বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্র ও রাজনীতিকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া শাসক, রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে কঠিন করে ফেলার মন্ত্রক, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রশ্রয়দানকারী, নিষ্ঠুর, বিশ্বাসঘাতক।
কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির অনিবার্য চরিত্র জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ খুব একটা চোখে পড়ে না। দুই পক্ষই কট্টর; হয় জিয়া খুব ভালো, নইলে খুব খারাপ। কিন্তু একজন মানুষের মধ্যে ভালো মন্দের মিশেল থাকতেই পারে, থাকাটা অস্বাভাবিকও নয়। জিয়াউর রহমানও একজন মানুষ। তার মধ্যে ভালো-মন্দ দুই-ই থাকতে পারে।
যদি এক পক্ষ তার মধ্যে ভালোর ভাগ বেশি পেতো, আরেকপক্ষ মন্দের ভাগ বেশি পেতো তাহলেও মানা যেতো। কিন্তু পক্ষের লোকজন তার মধ্যে কোনো দোষ খুঁজে পান না, বিপক্ষের লোকজন কোনো গুণ খুঁজে পান না। তবে দুইপক্ষের বিশেষণগুলোর বেশিরভাগই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমার বিবেচনায় জিয়াউর রহমান একজন সুযোগসন্ধানী ও ভাগ্যবান সৈনিক কাম রাজনীতিবিদ।
মুক্তিযুদ্ধের পর একই ব্যাচের দু’জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা সেনা প্রধান পদের দাবিদার ছিলেন- শফিউল্লাহ এবং জিয়া। বঙ্গবন্ধু শফিউল্লাহকে সেনা প্রধান করেন। যদিও ১৫ আগস্টের কৃষ্ণতম ভোরে বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়েও তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি শফিউল্লাহ।
বরং বঙ্গবন্ধুকে পালানোর চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কাপুরুষ শফিউল্লাহ এবং রাষ্ট্রপতির মরদেহ ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে রেখে রেডিও স্টেশনে গিয়ে খুনীদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। অল্প কয়েকজন সশস্ত্র সেনা কর্মকর্তার কাছে আত্মসমর্পন করে শফিউল্লাহর বাহিনী।
যা বলছিলাম, শফিউল্লাহকে সেনা প্রধান করা হলেও ক্ষুব্ধ জিয়াউর রহমানকে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে উপপ্রধান করা হয়, যদিও বাংলাদেশের সেনা কাঠামোতে উপপ্রধান পদ নেই। কিন্তু সান্ত্বনা পুরস্কারে খুশী হতে পারেননি জিয়াউর রহমান। তাঁর নানা অসন্তোষের খবর কানে যায় উর্ধ্বতনদের। জিয়াউর রহমানের চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। জিয়াউর রহমানকে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ একাধিকবার লিখেছেন, জিয়াউর রহমান তাকে ধরে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে আনুগত্যের কসম খেয়ে নিজের বদলির আদেশ ঠেকাতে পারেন। একবার ভাবুন, বঙ্গবন্ধু যদি শক্ত থাকতেন এবং জিয়া যদি রাষ্ট্রদূত হয়ে যেতেন তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস কী হতো? কোথায় থাকতেন জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান? এই কারণেই আমি জিয়াকে বলি ভাগ্যবান।
৭৫এর মার্চে কর্নেল ফারুক জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করে ইনিয়ে বিনিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলেন। উপ সেনা প্রধান ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে জিয়ার দায়িত্ব ছিল ফারুকের কাছ আরো কিছু কথা বের করে, তাদের পরিকল্পনা পুরোটা জেনে তাৎক্ষণিকভাবে ফারুককে গ্রেপ্তার করা এবং রাষ্ট্রপতিকে সতর্ক করা। কিন্তু তা না করে, তোমরা জুনিয়ররা চাইলে এগুতে পারো, বলে ফারুককে এক ধরনের গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দেন।
একই সঙ্গে জিয়া আরো একটি কাজ করেন। এরপর ফারুককে আর সাক্ষাত দেননি। এখানেই জিয়ার সুযোগসন্ধানী চরিত্র ফুটে ওঠে। জুনিয়ররা যদি কিছু ঘটিয়ে ফেলে ক্রিমের বড় অংশটা তো সিনিয়র হিসেবে তার পাতেই উঠবে। আর যদি তারা ব্যর্থ হয় বা ধরা পড়ে যায়, তাহলে নিজের সম্পৃক্ত না থাকার প্রমাণ দিতে পারবেন। ১৫ আগস্টের নৃশংসতার খবর শোনার পর শেভ করতে থাকা জিয়ার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘প্রেসিডেন্ট কিলড। সো হোয়াট। ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।’
রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর শুনে যে উপ সেনাপ্রধান এতটা নির্মোহ থাকতে পারেন, তাকে আপনি চাইলে নিষ্ঠুর বলতেই পারেন। ১৫ আগস্টের পরপর ক্রিমের দেখা না পেলেও ক্ষমতার ক্রিমটা সোনার থালায় সাজিয়ে জিয়াউর রহমানের পাতে তুলে দেয়া হয় নভেম্বরে।
এখানেই আবার ভাগ্যের দেখা পান জিয়া। ৩-৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহে জিয়াউর রহমান আরো অনেক সেনা কর্মকর্তার মত মারা যেতে পারতেন। জীবন বাঁচাতে জিয়া লিখিতভাবে পদত্যাগও করেছিলেন। ১৫ আগস্টের খুনীদের বিরুদ্ধে পাল্টা ক্যু করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন খালেদ মোশাররফ। আর ঘরে বন্দী থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে এলেন জিয়া।
তাঁকে আপনি ভাগ্যবান বলবেন না তো, কী বলবেন? একবার ভাবুন তো ৭ নভেম্বর যদি তাহেরের বিপ্লব সফল হতো, তাহলে ইতিহাসে জিয়ার স্থান কোথায় হতো? কর্নেল তাহেরের ইউটোপিয়ান বিপ্লবের ফসল ঘরে তুললেন জিয়া। আর যেই তাহের তার জীবন বাঁচালো তাকেই দ্রুত ঝুলিয়ে দিলেন ফাঁসিতে।
সেনাবাহিনীতে উস্কানি ছড়িয়ে তাহের যার বিবেচনায় যত বড় অপরাধই করে থাকুন, অন্তত জিয়া তো নিজের জীবনের জন্য তাহেরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে পারতেন। তাহের যদিও ক্ষমা চাননি, ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলেছেন বীরের মতই, তবুও জিয়া তাকে অন্তত প্রাণভিক্ষা দিতে পারতেন। প্রাণের বদলা প্রাণ।
তাহেরের ফাঁসিতেই শেষ হয়নি জিয়ার নিষ্ঠুরতা। বরং বলা যায় শুরু। পদ যাই হোক, ৭৫এর ৭ নভেম্বর থেকে ৮১এর ৩০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বেসর্বা ছিলেন জিয়াউর রহমান। বলা হয়, সেনাবাহিনীতে জিয়া খুব জনপ্রিয় ছিলেন, যার সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন তাহের।
কিন্তু সেই ‘জনপ্রিয়’ জিয়াকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বারবার সেনা অভ্যুত্থানের মুখে পড়তে হয়েছে এবং তিনি সেগুলো মোকাবেলা করেছেন নিষ্ঠুরভাবে। জিয়াউর রহমানের আমলে কত সেনা সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও অজানা। তেমনই এক সেনা অভ্যুত্থানেই প্রাণ দিতে হয় তাকে।
সেনানায়ক থেকে জননায়কে পরিবর্তনের ধাপে জিয়াউর রহমান দারুণ কিছু পদক্ষেপ নেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ১৯ দফা কর্মসূচি, কৃষি বিপ্লবের ডাক, দেশজুড়ে ঘুরে ঘুরে খাল কেটে দারুণ জনপ্রিয়তা পান জিয়া। মৃত্যুর পর তাঁর জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে। বিশেষ করে জিয়ার জানাযায় বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি তখন জিয়ার ভাবমূর্তি অনন্য উচ্চতায় পৌছে দেয়।
১৫ আগস্টের পরের কয়েকমাসের টালমাটাল সময় মানুষ একটু স্থিতিশীলতা চেয়েছিল, যা দিতে পেরেছিলেন জিয়া। এটা মানতেই হবে তখন জিয়ার নেতৃত্বেই খেই হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ আবার উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে। কিন্তু এই স্থিতিশীলতার আড়ালে জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির স্থায়ী ক্ষতি করেছেন। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের সূচনা ঘটেছে তাঁর হাত ধরেই।
জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও তাঁর সময়ে, তাঁর প্রশ্রয়েই রাজনীতিতে অর্থ আর অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু। তবে তারচেয়েও বড় ক্ষতি তিনি করেছেন বাংলাদেশের মৌলিক চেতনায়। নিজে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, রাজাকার আব্দুল আলীমকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। পাকিস্তানের নাগরিক গোলাম আযমকে দেশে আসার সুযোগ দিয়েছেন।
জামায়াতসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক করেছেন। সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে দ্রুত সাম্প্রদায়িক ইসলামী রাষ্ট্রে বদলে ফেলেন, যেখানে একাত্তরের পরাজিত শক্তি গর্ত থেকে বেরিয়ে দাপটের সাথে রাজনীতি শুরু করেন।
১৫ আগস্টের আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জিয়ার ভূমিকা না থাকলেও পরে তিনি যা করেছেন তা রীতিমত অপরাধ। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করেছেন। মুশতাকের করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বহাল রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখেন।
আজ তারেক রহমান ইতিহাসের নতুন পাঠ নিলেও জিয়া কখনোই নিজেকে প্রথম রাষ্ট্রপতি তো দূরের কথা স্বাধীনতার ঘোষকও দাবি করেননি। তবে জিয়ার আমলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিলেন, যার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত।
তবে মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল এবং বীরোচিত। একাত্তরেও তিনি ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন। ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকায় পাকিস্তানী হারাদারদের ক্র্যাক ডাউনের পর বেলাল মোহাম্মদরা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার শুরু করেন। ২৬ মার্চ সেখান থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য বেলাল মোহাম্মদরা প্রথমে মেজর রফিককে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি আসতে না পারায় বেলাল মোহাম্মদ নিজে পটিয়ায় গিয়ে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আসেন। কালুরঘাটে বেলাল মোহাম্মদের ‘আমরা তো সব মাইনর, আপনিই একমাত্র মেজর।
আপনি কিছু বলুন’ এই আহবানকে সিরিয়াসলি নিয়ে প্রথমে নিজেকে ‘হেড অব দ্য স্টেট’ বললেও পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। জিয়াউর রহমানের আগে এম এ হান্নান ছাড়াও আরো ৭/৮ জন বেতার কর্মী স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। তারপরও ঐ সময়ে একজন সেনা কর্মকর্তার কণ্ঠে এ ধরনের ঘোষণা তখন মানুষকে দারুণ উজ্জীবিত করেছিল।
পাকিস্তান এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশকে দারুণ শক্ত বার্তা দিয়েছিল সেই ঘোষণা। এখানেও ভাগ্যের দেখা পেয়েছেন জিয়া। বেলাল মোহাম্মদের ডাকে সাড়া দিয়ে মেজর রফিক যদি সময়মত আসতেন, তাহলে হয়তো এই সুযোগটা তিনিই পেতেন। যেভাবেই হোক ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় উপস্থিত থেকে জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজের স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধেও তার ভূমিকা ছিল বীরোচিত। তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার। তাঁর নামের আধ্যাক্ষরে গঠিত ‘জেড’ ফোর্সেরও অধিনায়ক ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীর উত্তম’ খেতাম পেয়েছেন। আজ যখন আওয়ামী লীগ জিয়াকে বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা বা সিআইএ’র চর বলে, তখন কিন্তু তারা আসলে তাজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন একাত্তরের প্রবাসী সরকার এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।
সিআইএ’র চরকে কেন প্রবাসী সরকার সেক্টর কমান্ডার বানিয়েছিল? বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাকে কেন বঙ্গবন্ধু সরকার বীরউত্তম খেতাব দিয়েছিল? কেন উপ সেনাপ্রধান বানিয়েছিল? আওয়ামী লীগ জিয়াকে বাই চান্স মুক্তিযোদ্ধা বললে তারেক রহমান তার পিতাকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে জবাব দেন। এসবই ঢিল-পাটকেল; ইতিহাস নয়, সত্য নয়।
জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ২১ বছর বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে রেখেছিলেন, তাঁকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। ইতিহাসে যার যার স্থান নির্ধারিত। কাউকে ছোট করা যাবে না, বড়ত্বও আরোপ করা যাবে না। বিএনপি জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর সমান করার অনেক চেষ্টা করেছে, পারেনি, পারা সম্ভবও নয়।
সেই সমানিকীকরণের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে বিএনপি সরকার বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে একই বছর স্বাধীনতা পদক দিয়েছিল। দুরভিসন্ধিটা টের পেয়ে আওয়ামী লীগ তখনই এর প্রতিবাদ করেছিল। বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তাই স্বাধীনতা পদক দিয়ে আসলে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হয়েছে, তাঁকে টেনে জিয়ার সমান করার চেষ্টা হয়েছে।
২১ বছর জিয়া-এরশাদ-খালেদা যা করেছে; এখন আওয়ামী লীগ তাই করছে। জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টাও সফল হয়নি, জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টাও সফল হবে না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। ইতিহাসেই সবার অবস্থান নির্ধারিত।
আদালতের আদেশের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ জিয়ার স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করেছে, দ্রুত তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে জাদুঘর থেকে। মজাটা হলো, তখন আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ জানালেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা পদক কিন্তু প্রত্যাহার করা হয়নি। স্বাধীনতা পদক জিয়াই প্রবর্তন করেছিলেন।
আবার শর্ষিনার পীরের মত চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীকে দিয়ে এই পদককে কলঙ্কিত করার কাজটিও জিয়ারই করা। তবু জিয়াউর রহমানের মত একজন বীর উত্তমের স্বাধীনতা পদক কেড়ে নেয়াটা অন্যায়, অনৈতিক। আর পদক কেড়ে নিলেই কি মানুষের মন থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে?
প্রভাষ আমিন : সাংবাদিক, কলাম লেখক।
probhash2000@gmail .com
– পরিবর্তন
পাঠকের মতামত: